
রিদুয়ানুল হক সোহাগ:
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন বিভাগের জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। প্রভাব খাটিয়ে দোকানপাট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতারাই এখনো দখল করে আছে বন বিভাগের শত শত একর ভূমি।
পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ ও ১৯ নম্বর ক্যাম্পে নামে-বেনামে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক বাজার, যা নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর, যুবলীগ নেতা সরওয়ার ও ছাত্রলীগ নেতা নিশান। নিজেদের নামেই বাজারের নামকরণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্যাম্পে আত্মগোপনে থেকে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের নেতৃত্বে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে আলমগীর বাজার, সরওয়ার বাজার ও আলম বাজার রোহিঙ্গাদের দিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
অভিযোগ আছে, এই তিনটি বাজার থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আয়ের বিশাল একটি অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের পতিত আওয়ামী লীগ, ছিনতাইকারী, ডাকাত দল ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা রাসেল ও মিজান বাহিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ওই সিন্ডিকেট।
এই বাজার গুলোতে রয়েছে মুদির দোকান, ফার্মেসি, কাঁচা তরি তরকারি, হোটেল, ট্রি স্টোল, গ্যাস স্টেপের দোকান, রকমারি স্টোর, মাছ ও মাংসের দোকান, কাপড়ের দোকান, মোবাইলের দোকান, জুয়েলার্সের দোকান। এসব দোকানের কোনটিরই বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ও কতৃপক্ষের ছাড়পত্র নেই। অবৈধ হাটবাজারে কয়েক হাজার দোকান বসিয়ে স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদকে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব ও কর ফাঁকি দিচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসানো বাজারগুলো আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতারা ব্যবসা পরিচালনা করছে রোহিঙ্গা মাঝি থেকে শুরু করে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
এই বাজারগুলোর কারণে ব্যবসা হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় রোহিঙ্গা আগমনের পূর্বে বন বিভাগের জায়গা লিজ নিয়ে প্লট তৈরি, চারা রোপণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু বর্তমানে অবৈধভাবে দোকানপাট ও বাজার গড়ে তোলে জায়গাগুলো দখল করে ফেলা হয়েছে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের নেতারা।
এসব অপকর্ম ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বন বিভাগকে আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশীদারেরা। এছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে এই ধরনের অবৈধ বাজার থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব বলে মনে করছেন ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহেল।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জে কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, বনভূমি গ্রাস করে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছে একটি প্রভাবশালী মহল। শিগগিরই বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের তালিকা করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের দায়িত্বরত ১৩ ও ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ আল ইমরান জানিয়েছেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার হবে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বাজার গুলোতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
পাঠকের মতামত